বিচারকসংকটে হচ্ছে না হত্যা মামলার বিশেষ বেঞ্চ

Date:

দেড় দশক আগে আজকের দিনে তত্কালীন বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত হয়েছিল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ঐ দিন ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বিডিআরের মহাপরিচালকসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। নৃশংস ঐ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার বিচারের দুটি ধাপ সম্পন্ন হলেও তৃতীয় ধাপের বিচার এখনো শুরু হয়নি। বিচারক-সংকটের কারণেই এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন আশা প্রকাশ করে বলছেন, এই মুহূর্ত আপিল বিভাগে পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারক নেই। দ্রুতই বিচারক নিয়োগ হবে। বিচারক নিয়োগের পর বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হলে তখন এই হত্যা মামলার আপিল শুনানি হবে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত করা হয় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে। লাশ বিকৃতের পর নিহতদের ইউনিফর্মসহ র্যাংক ব্যাচ খুলে ফেলা হয়, যাতে ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহগুলো শনাক্ত করা না যায়। সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বিডিআর জওয়ানদের এমন নৃশংসতার চিত্র ফুটে ওঠে। যা স্থান পেয়েছে উচ্চ আদালতের রায়ের পাতায় পাতায়।

আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে কেন বিলম্ব: হত্যা মামলার বিচার ২০১৩ সালে শেষ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫২ বিডিআর জওয়ানের ডেথ রেফারেন্স ও যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডিত আসামিদের আপিল ২০১৭ সালে নিষ্পত্তি করে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ২৯ হাজার পৃষ্ঠার আপিলের রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়, পিলখানায় তত্কালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এই কলঙ্ক চিহ্ন তাদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।’ হাইকোর্টের নকল শাখা থেকে বড় ভলিউমের এই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ এবং রায় পর্যালোচনা করে আপিল দায়ের করতে অনেকটা সময় নেয় আসামি পক্ষ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ফাঁসির ১৩৯ আসামিসহ দণ্ডিতরা। এছাড়া বেশ কিছু আসামির সাজা অপর্যাপ্ত হওয়ায় তাদের ফাঁসি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ থেকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিলের পর গত বছরের অক্টোবর মাসে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়। শুনানির জন্য প্রস্তুত হলেও বিচারক-সংকটের কারণে আপিল শুনানি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে বর্তমান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাসে বিচারকাজ চলে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারকাজে অংশ নেন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিন চলতি মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাবেন। তখন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা গিয়ে দাড়াবে পাঁচ জনে। আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। ফলে আপিল বিভাগে তিনি এই মামলার আপিল শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন না।

এছাড়া প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বাকি চার বিচারপতিকে নিয়ে যদি এখন আপিল শুনানি গ্রহণ করা হয়, তাহলে আপিল বিভাগে বিচারাধীন অন্যান্য মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, আপিল শুনানি করতে আপিল বিভাগে চার জন বিচারক প্রয়োজন। আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে টানা ৪০/৫০ কার্যদিবস দরকার। এখন আপিল শুনানি গ্রহণ করলে অন্যান্য মামলার বিচারকাজ থমকে যাবে। সেজন্য নতুন বিচারক নিয়োগের পর বিশেষ বেঞ্চ গঠন হলে আপিলের শুনানি সম্ভব হবে।

আসামি পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুনানি করতে প্রস্তুত। যখন বিশেষ বেঞ্চ গঠিত হবে, তখনই আমরা শুনানিতে অংশ নেব।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

সর্বশেষ খবর

সম্পর্কিত খবর
Related

২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হওয়া ১৪ টন খেজুর জব্দ

নারায়ণগঞ্জের কাচপুরে একটি হিমাগার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৪ টন খেজুর...

এবার জেলখানার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখছেন পরীমণি

ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমণি। নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যারিয়ারজুড়েই...

এমনভাবে পুড়েছে যে চেনা যাচ্ছিল না, ১১ দিন পর মরদেহ হস্তান্তর

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় ১১ দিন পর নাজমুল...

কারওয়ান বাজারে ১০০ গ্রাম ওজনে গরুর মাংস বিক্রি

দাম বেশির কারণে গরুর মাংস কেজিতে কিনতে পারেন না...